April 26, 2024, 9:42 am

ফেনির সোনাগাজীতে পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়

ফেনি প্রতিনিধিঃ পর্যটকদের উচ্ছ্বাসে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ফেনীর সোনাগাজীর পর্যটন স্পটগুলো। ঈদের দিন বিকাল থেকে আগত হাজার হাজার পর্যটকের পদচরাণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সোনাগাজীর কয়েকটি পর্যটন স্পট। মনের সুখে প্রকৃতির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। নাচে-গানে, আনন্দ-উল্লাসে প্রকৃতির ভালোবাসায় সিক্ত যেন পর্যটকের দল। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পর্যটন স্পটগুলোতে ছুটে আসছেন সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা।

দেখা গেছে, ঈদের দিন বিকাল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে পর্যটন স্পটগুলোতে। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ঈদের তৃতীয় দিনেও সেই ভিড় অব্যাহত ছিল। পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে প্রতিদিনই এখানে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন। এখানে মুহুরী সেচ প্রকল্পের ৪০ জলকপাট, বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মৎস্য ঘের, জোয়ার-ভাটার পানি এবং ফেনী নদীর দুই কূল বেয়ে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেই ছুটে আসছেন পর্যটকরা।

এ ছাড়াও দেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর’। এখানে গড়ে উঠছে অসংখ্য শিল্প কারখানা। নয়নাভিরাম এই শিল্পাঞ্চল দেখতে ছুটে আসছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দল। তা ছাড়াও ছোট ফেনী নদীর উপকন্ঠে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নির্মাণ করা হয়েছে মুছাপুর ক্লোজার। এটি বন্যা ও জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

সব দর্শনীয় স্থান ছাড়াও গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম লেক। সেই লেকে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ঝাউবাগান।

এ ছাড়াও নদীতে জোয়ার-ভাটার দৃশ্য, লেকে নৌকা-ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে পর্যটকদের আনন্দ উল্লাস চোখে পড়ার মতো ছিল। ছোট নদীর উপরে সাহেবের ঘাট নির্মাণের ফলে ফেনীর সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জবাসীর মাঝে রচিত হয়েছে সেতু বন্ধন। এক সময়ের এই খরস্রোতা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে ভেসে যাওয়া বহু প্রাণ আজও ফিরে আসেনি । মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই নদীতে ২ দশমিক ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণের ফলে নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির এক লীলা ভূমি। নদীতে চলছে সারি সারি নৌকা। সেতুতে ও তার আশপাশের কাশবনে কেউ গ্রুপ করে ছবি তুলছে আবার কেউ তুলছে সেলফি। কেউ আবার নানা অঙ্গ-ভঙ্গির আনন্দে মাতোয়ারা। নির্মল বাতাসে প্রশান্তির সিঁড়িতে বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে কেউ কেউ গল্পে মেতেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সবাইকে যেন প্রকৃতির এই সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে যাচ্ছেন সকল পর্যটকরা। ফলে বেলা গড়িয়ে রাত ১০টা অবদি চলছে পর্যটকদের প্রাণের উচ্ছ্বাস।

উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতকান্দি গ্রামের প্রবাসী কবির খান বন্ধুদের নিয়ে গত তিন দিন ধরে ছুটে গেছেন উপজেলার ৩টি পর্যটন স্পটে। পর্যটকদের ভিড়ে তিনি যেমন বিমোহিত তেমনি প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছেন তিনি। নির্মল বাতাস আর প্রকৃতির ভালোবাসা তাকে বাসায় থাকতেই যেন দিচ্ছে না। রাত পোহালেই ছুটে যান এসব পর্যটন স্পটে।

তিনি বলেন, বিনোদন প্রেমিদের জন্য উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। অথচ অপার সম্ভাবনাময় সোনাগাজীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন কেন্দ্র বা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলে একদিকে সরকারের যেমন রাজস্ব আয় বাড়বে অন্যদিকে পর্যটক বা বিনোদন প্রেমিদের নজর কাটবে। শিক্ষা, ব্যবসা ও রেমিট্যান্সে অগ্রসর জেলা ফেনীর সর্ববৃৎ উপজেলা সোনাগাজী। এই উপজেলায় নজর কাড়া কয়েকটি পর্যটন স্পট থাকলেও সরকারি বা বেসরকারি অর্থায়নে বাণিজ্যিক কোনও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। পর্যটকদের অবকাশ যাপনে গড়ে উঠেনি কোনও আবাসিক হোটেল।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র অ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, সোনাগাজীর পর্যটন স্পটগুলো ঈদের ছুটিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের ফলে সমগ্র দেশের মানুষদের সঙ্গে উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর মানুষদের একটি সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। সোনাগাজীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তাই তিনিও সরকারি অথবা বেসরকারি উদ্যোগে দ্রুত একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জোর দাবি জানান।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মঞ্জুরুল হক বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে মনোমুগ্ধকর আবহাওয়া ছিল। হাজার হাজার মানুষ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে আসেন সোনাগাজীর পর্যটন স্পটগুলোতে। পর্যটন স্পটগুলো ঢেলে সাজাতে এবং বিনোদন প্রেমিদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন নতুন পর্যটন স্পট তৈরির জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে পর্যটন স্পটগুলোতে আসা কিশোরদের হৈ হুল্লোড় পর্যটকদের মনে ভীতির সঞ্চার করলেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান বলেন, শহর ছেড়ে পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষগুলো নাড়ির টানে নিজ গ্রামে ছুটে আসে। আবার প্রকৃতির মা খ্যাত উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসে হাজারো পর্যটক। তাই পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি উপলক্ষ্যে সোনাগাজীর কয়েকটি পর্যটন স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের বিশেষ টিম মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আদর্শগ্রাম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, মুহুরী প্রজেক্ট পুলিশ ফাঁড়ি ও সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের সমন্বয়ে একাধিক টিম পর্যটন স্পটগুলোতে জননিরাপত্তায় কাজ করছেন। যার ফলে পর্যটন স্পটগুলোতে কোন প্রকার হয়রানি ছাড়া পর্যটকরা নির্বিঘ্নে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছে। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় ঈদের ছুটিতে সোনাগাজীর পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের তিল ধারণের ঠাই নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD