April 26, 2024, 11:28 pm

ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীতে জমে উঠেছে পশুর হাঁট

রাজশাহী প্রতিনিধিঃ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আর মাত্র ৩দিন পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে পশুরহাট গুলো বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার গবাদি পশুর দাম একটু চড়া।

গত মঙ্গলবার (৫ জুলাই) উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুরহাট ঘুরে দেখা গেছে, হাঁক-ডাকে জমে উঠেছে হাট প্রাঙ্গন। ছোট-বড় ও মাঝারি ধরবেনর পশুর সমাহারে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। হাটে পশুর সরবরাহ প্রচুর তবে অন্য বছরগুলোর চেয়ে ক্রেতা কম বলে মনে করছেন বিক্রে তারা।

তারা বলছেন, গতবছরের তুলনায় ভালো দামে গরু-মহিষ বিক্রির প্রত্যাশা রয়েছে। তবে ক্রেতা কম। দামও বলছে কম। সামনের কয়েকদিন ক্রেতা সমাগম বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন বিক্রেতারা।

তানোরের কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন ৫ টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। তিনি গ্রাম থেকে গরু কিনে হাটে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। তার ৪ মণের গরুর দাম ক্রেতারা বলছেন ৯০ হাজার এবং ৫ মণের গরুর দাম বলছে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। এই ব্যবসায়ীর ভাষ্যমতে, তার কেনা দামের চেয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা কম দাম হাঁকছেন ক্রেতারা। এই হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছিলেন পবার আইনাল হক। তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি বাড়ি গরু কিনে এসে হাটে বিক্রি করেন। ইদের হাট জমজমাট থাকলে প্রতিটা গরুতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ করেন তিনি। এবারও সেই প্রত্যাশা নিয়ে গরু কিনেছেন। হাটে বিক্রেতা প্রচুর। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। এখন হাট জমজমাটভাব থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি জমেনি।

আশরাফ হোসেন নামের এক গরু খামারি জানান, গতবারের চেয়ে এইবার গরুর দাম বেশি। কিন্তু গরুর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় তেমন বেশি না। আইনাল কবিরাজ নামের এক ক্রেতা জানান, ৫ মণ ওজনের একটি গরু কিনতে তারা ভাগের ৭ জন এসেছেন। হাটের শুরুর দিকে তারা প্রতিবার আসেন। কারণ প্রত্যাশিত দামের মধ্যে শেষের দিকে হাটে গরু পাওয়া যায় না। এবার গরুর দাম চড়া। মহিষেও স্বস্তি নাই। হাট-ঘুরে পছন্দ মতো গরু কিনবেন।

রাজশাহী সিটি হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ফারুক হোসেন ডাবলু জানান, হাটে পশুর আমদানি ভালো আছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসছেন। করোনার কারণে গতবার বাইরে থেকে ব্যাপারিরা সেভাবে আসতে পারেন নি। এবার সবাই আসছেন। হাক-ডাক দিচ্ছেন। বেচা-বিক্রি শুরুও হয়েছে। কিন্তু যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। কয়েক হাতে আছে; হয়তো এখন বেশ জমজমাট কেনাবেচা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। রাজশাহী জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৫২ টি। ১৬ হাজার ৭৯ জন খামারির কাছে আছে এক লাখ ২১ হাজার ৩৭২টি গরু, দুই লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫টি ছাগল, ৩৮ হাজার ২৪৫ টি ভেড়া ও তিন হাজার ২১১টি মহিষ। জেলায় এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা তিন লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি। চাহিদার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার পশু বেশি আছে রাজশাহীর ৯ উপজেলায়।

গত বছর রাজশাহীতে কোরবানির জন্য তিন লাখ ৮২ হাজার পশু পালন করা হয়েছিল। আর কোরবানি হয়েছে প্রায় তিন লাখ ৯ হাজার পশু। হিসাব অনুযায়ী গত বছরের প্রায় ৭৩ হাজার কোরবানির পশু অবিক্রিত রয়েছে। সেই পশুর একটি বড় অংশ এবারের কোরবানির পশুর সংখ্যায় যোগ হয়েছে। রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দফতর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এবারও পশু অবিক্রিত থাকার শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, ‘রাজশাহীতে পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর গত রবিবারের (৩ জুলাই) হাট পর্যবেক্ষণে করে আমরা বলতে পারি, পশুর সরবরাহ বেশি। ক্রেতারা আসছেন। বাজার বোঝার চেষ্টা করছেন। ঈদের দুইদিন আগে থেকে কেনা-বেচা পুরোপুরি জমে উঠবে। চাহিদার তুলনায় গবাদি পশুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় গতবারের মত এবারো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পশু অবিক্রিত থাকতে পারে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD