March 29, 2024, 11:45 am

কোরবানির জন্য সিরাজগঞ্জে প্রায় ৪ লাখ গরু প্রস্তুত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার ১৫ হাজার খামারে চলছে গবাদিপশু মোটাতাজা করণের কাজ। করোনার প্রভাবে গত দুই বছর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এ বছর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। জেলায় প্রায় ৪ লাখ গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন স্থানীয় খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৫ হাজার বাণিজ্যিক খামার ও ব্যক্তিগতভাবে এই গবাদিপশুগুলো প্রস্তুুত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়তি লাভের আশায় অনেকেই কোরবানির ৫ থেকে ৬ মাস আগেই গরু লালন-পালন শুরু
করেন। কোরবানি উপলক্ষে জেলায় ৩ লাখ ৯১ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে।

এবছর জেলায় প্রায় আড়াই লাখ গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে। বাকি পশু ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য পাঠানো হবে বলে খামারিদের সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় খামারি আছেন ১৫ হাজার। এই খামারগুলোতে দেশি, শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে প্রত্যেক খামারি কয়েক লাখ টাকা করে লোকসান গুনেছেন। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সেই লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছেন খামারিরা। তবে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এতে গবাদি পশু পালনে খরচ বেড়েছে।

খামারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ মাস আগে ৪০ কেজি ভুষির মূল্য ছিল ১৩শ থেকে ১৪শ টাকা। এখন সেই ভুষি কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। আর খৈলের ৪০ কেজি বস্তার বাজারদর আগে ছিল ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা। এখন খৈলের বস্তার দাম ২ হাজার টাকা।

এ ছাড়া ধানের কুড়ার দাম দ্বিগুণ হওয়ায় বর্তমানে খামারিদের কিনতে হচ্ছে ৫শ ৫০ থেকে ৬শ টাকায়। সব মিলিয়ে খরচ বাড়লেও গবাদি পশু পালন করে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না খামারিরা। এ জন্য পশু উৎপাদনও খুব একটা বাড়েনি। এতে করে এবার পশুর হাটগুলোতে চাহিদার তুলনায় কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে। এ সংকটের কারণে হাটে ছোট গরুর দাম স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ হাজার, মাঝারি গরু ১০ থেকে ১২ হাজার এবং বড় গরুর দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার
টাকা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

সদর উপজেলার কালিয়া কান্দাপাড়ার তালুকদার ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার শফিউর রহমান জানান, এবার কোরবানির জন্য ৪৫টি ষাড় প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে এবার বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

একই উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের খামারি বক্কার হোসেন বলেন, এ বছর ৫টি ষাড় প্রস্তুত করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাপারি বাড়িতে আসে নাই, আবার হাটেও কেনাবেচা তেমন নাই। কী যে করি, চিন্তায় আছি।

শাহজাদপুর উপজেলার উল্টাডাব গ্রামের খামারি শাহাবুদ্দীন জানান, চলতি বন্যায় গো-চারণ ভূমি প্লাবিত হয়েছে। ঘাসের জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

এইক উপজেলার পোতাজিয়া গ্রামের খামারি ফরমান হোসেন বলেন, ১০টি গরু কোরবানির জন্য পালন করেছি। বন্যায় মাঠে পানি ওঠায় নেপিয়ার ঘাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্তমানে গরুকে আমরা কেনা খাবার খাওয়াচ্ছি। এতে গরুর পেছনে ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গরু বিক্রি করে খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

তালগাছী হাটের ইজারাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনও কোরবানির হাট জমে নাই। বাইরের ব্যাপারিও তেমন আসছে না। এছাড়া করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের হাতেও তেমন টাকা না থাকায় এখনও হাট জমে উঠেনি।

জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, কোরবানি ঈদে জেলায় ১৫ হাজার খামারে ৩ লাখ ৯১ গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে।

ঈদে জেলায় স্থায়ীভাবে ৪১টি ও অস্থায়ীভাবে ১৫টি হাট বসবে। এরই মধ্যে গবাদিপশু বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। পুরোদমে হাট শুরু হলে সেসব স্থানে মেডিক্যাল টিম বসানো হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD