October 13, 2024, 1:43 pm
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি শুক্রবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত হু হু করে বাড়ছে। শনিবার দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছিল। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সেই সাথে বানভাসী এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্যে ও জ্বালানীর তীব্র সংকট।
সকাল উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যান সূত্রে জানা যায়, গত দুইদিনে অস্বাভাবিকভাবে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ৯ উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় ১৪০টি গ্রামের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেইসাথে নদীর তীব্র ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৬০টি বাড়ি।
এদিকে, রৌমারী, চররাজিবপুর, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই মারাত্মক অবনতি ঘটছে। বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ এখন অনেক। বানের পানির কারণে জেলায় প্রায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নিচে। নদী ভাঙন ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বানভাসী মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে রয়েছে।
এদিকে তীব্র পানির স্রোতে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়ারহাট এলাকায় অস্থায়ী বেড়ি বাঁধের একুশ ফুট ভেঙে মেইনল্যান্ডের ফসলসমূহ নিমজ্জিত হয়ে গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের বন্যায় রৌমারী ও রাজিবপুরে উপজেলা প্রশাসন থেকে ৬ হাজার প্যাকেট এবং গত দুইদিনে সদর উপজেলায় প্রায় ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দুর্গতদের বিতরণ করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসেদুল হাসান জানান, আমরা দুর্গত এলাকায় গিয়ে উদ্ধার কার্যক্রমসহ শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। এছাড়াও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম শনিবার দুপুরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর, রলাকাটা এলাকার বন্যাদুর্গত মানুষের খোঁজখবর নিয়ে সেখানে ত্রাণ বিতরণ করেন। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি এখন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রৌমারীতে ৪৪টি এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ১১টি সহ ৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলার বন্যার্তদের ২৯৫ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শুকনো খাবার ১ হাজার প্যাকেট, শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গো-খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী অফিসারগণ পর্যায়ক্রমে বিতরণ করছেন।
এছাড়াও বর্তমানে ৮ লাখ টাকা এবং ৩০৮ মেট্রিকটন চাল মজুদ রয়েছে এবং নতুন করে বরাদ্দ চেয়েছি পাঁচশত মেট্রিকটন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার। ত্রাণ কিংবা বন্যার্তদের সাহায্যে কোন সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।