October 13, 2024, 12:36 pm
যমুনা নিউজ বিডিঃ দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতি বছর এই রোগে মারা যায় ২০ হাজার মানুষ। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না যে, তারা এই রোগে আক্রান্ত কি না। বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতিদিন হেপাটাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, হেপাটাইটিস প্রতিরোধে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন এবং হেপাটাইটিস ভাইরাস নির্মূলে সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে হেপাটাইটিসের পরীক্ষা বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই রোগ নির্মূলের জন্যে জনগণের মধ্যে ভর্তুকিতে সরকারের হেপাটাইটিসের ওষুধ ও টিকা স্বল্পমূল্যে সহজলভ্য করতে হবে। নইলে এই রোগের চিকিত্সা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন, হেপাটাইটিস বি ইমিউনোগ্লোবিউলিন, বিশেষায়িত পরীক্ষাগুলো সহজলভ্য করা জরুরি। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে হয়। অনেকেই এর ব্যয়ভার বহন করতে পারে না। ফলে হঠাৎ ওষুধ বন্ধ করতে বাধ্য হন।
তবে আশার কথা, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের আরোগ্য লাভকারী ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। সব রকম অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ সহজলভ্য করা জরুরি। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা উচিত বলে মনে করেন তারা। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস সাধারণত অনিরাপদ রক্ত, সিরিঞ্জ, দৈহিক মিলন ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। যারা মাদকাসক্ত, একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহার করে, তাদের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। অনিরাপদ আকুপাংচারের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। মা থেকে নবজাতকের শরীরে ছড়াতে পারে। টুথব্রাশ ও শেভিং উপকরণের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তবে থালাবাসন ও চামচের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস ছড়ায় না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও দেশের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রতি বছর দেশে ২০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে এই রোগে। আমরা জাকাত ফান্ডের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার রোগী ও দরিদ্রদের চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি। হেপাটাইটিসের ওষুধ ও টিকা সহজলভ্য করার সুপারিশ জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক রোগী চিকিৎসার মাঝপথে হারিয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এর প্রধান কারণ ব্যয়বহুল চিকিৎসা।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক চিকিৎসকের উচিত রোগীকে চিকিৎসার পাশাপাশি সেই রোগ প্রতিরোধে রোগীকে পরামর্শ দেওয়া। এটাই হবে সামাজিক দায়িত্ববোধ। বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষ ও প্রতি ৩০ সেকেন্ডে ১ জন হেপাটাইটিস বি ও সি এই দুই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করে। তবে আশার কথা, এই দুই নীরব প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধযোগ্য। আমাদের দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ এই দুই ভাইরাসে আক্রান্ত। চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে আত্মনিয়োগ করা। ’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহিনুল আলম বলেন, যে কোনো বয়সের মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। অ্যাকিউট হেপাটাইটিসের ৩৫ শতাংশ, ক্রনিক হেপাটাইটিসের ৭৫ শতাংশ, লিভার সিরোসিসের ৬০ শতাংশ ও লিভার ক্যানসারের ৬৫ শতাংশের জন্য হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দায়ী।
গবেষণায় আরো দেখা যায়, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত জনসংখ্যা ৫ দশমিক ১ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বাস। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ। নারীর সংখ্যা ২৮ লাখ ও শিশু রয়েছে ৪ লাখ। আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। লিভারের জন্য আরেকটি ক্ষতিকর ভাইরাস হলো হেপাটাইটিস সি। লিভার সিরোসিসের ৩০ শতাংশ ও লিভার ক্যানসারের জন্য ১৭ শতাংশ দায়ী হেপাটাইটিস সি ভাইরাস।
এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মোহাম্মদ লুতফুল লতিফ চৌধুরী বলেন, হেপাটাইটিস এমন একটি রোগ যা অদৃশ্য শত্রুর মতো। যেহেতু আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ জানেই না যে তারা এই রোগে আক্রান্ত, তাই এর ভয়াবহতা আরো বেশি। সুতরাং, গোষ্ঠীগত, সমাজগত, সরকারি-বেসকারি ও স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে।