October 6, 2024, 12:29 am
যমুনা নিউজ বিডিঃ গত ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে খাবার, ওষুধ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রবেশসহ সর্বাত্মক অবরোধ দিয়েছে ইসরায়েলি সরকার।
গাজার হাসপাতালগুলো মজুত করা জ্বালানি দিয়ে দুই সপ্তাহের মত চললেও ফুরিয়ে এসেছে জ্বালানি। আর তাই জ্বালানির অভাবে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো।
গাজায় চিকিৎসার মৌলিক সরঞ্জামের প্রচণ্ড অভাব দেখা দিয়েছে। এমনকি নেই ব্যথানাশক ওষুধ, যথেষ্ট পরিমাণ ব্যান্ডেজ। অথচ ইসরায়েলের বর্বর হামলায় প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে আহত, নিহতের সংখ্যা। গাজার চিকিৎসকরা এরমধ্যে আসুরিক এক লড়াই করছেন জীবন বাঁচানোর। কিন্তু, সবকিছুই তো তাদের বিপক্ষে। ফিলিস্তিনিদের জীবনের কোনো মূল্যই নেই আমেরিকা-ইউরোপের নেতাদের কাছে।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি জানায় যে, প্রয়োজনীয় জ্বালানির সংকটে গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলি জরুরি বিভাগ বাদে বাকি সব বিভাগ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
বিবিসি রেডিও ফোর-এর টুডে প্রোগ্রামকে বিবিসির সাংবাদিক রুশদি আবুলউফ বলেন, “জ্বালানি খরচ কমাতে হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগগুলি বন্ধ করা হয়েছে। যাতে করে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “তারা কেবল জীবন বাঁচানোর মিশনে মনোনিবেশ করছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র মানুষের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হবে। গুরুত্বর অপারেশন ও কিডনি ডায়ালাইসিসের মত চিকিৎসা দেয়া হবে কেবল।”
এটি একটি অত্যন্ত বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বলে অভিহিত করেন বিবিসির সাংবাদিক।
নরওয়েজিয়ান এইড কমিটির ম্যাডস গিলবার্ট মিশর থেকে বিবিসিকে জানান গাজাতে তার সহকর্মীরা “ভয়াবহ পরিস্থিতির” মোকাবিলা করছেন।
ইসরায়েলি বোমা হামলার ফলে অনেক লোক গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি গর্ভবতী মহিলাদের অকাল প্রসবের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
গাজার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ডায়ালিসিস সেবা নেন প্রায় ১ হাজার রোগী। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রয়েছে অন্তত ১৩০ জন অপরিপক্ক (প্রিম্যাচিউর) শিশু। সেই সঙ্গে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন এমন বহু রোগী রয়েছেন, যাদের জীবন রক্ষার জন্য হাসপাতালে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি।
ডব্লিউএইচওর পাশাপাশি শিশু অধিকার ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনিসেফ ও গাজা উপত্যকায় জ্বালানি প্রবেশের অনুমতি দিতে জোর দিয়েছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, “হাসপাতাল, ডিস্যালিনেশন প্লান্ট এবং ওয়াটার পাম্পিং স্টেশনের মতো প্রয়োজনীয় মৌলিক সুবিধার জন্য জ্বালানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর কো অর্ডিনেশন অব হিম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওচা) এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজা উপত্যকার হাসপাতাল, বেকারি এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে চালু রাখার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার ৮০০ লিটার ডিজেল ও পেট্রোল প্রয়োজন।
৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের উপত্যকা গাজায় বসবাস করেন প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি। দারিদ্র্য ও বেকারত্বপীড়িত এই ফিলিস্তিনিদের এক তৃতীয়াংশ সরাসরি জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের জেরে রাফাহ ক্রসিং বন্ধ থাকায় দু’সপ্তাহ কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে পারেনি গাজায়। ফলে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত সেই উপত্যকায় ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় শুরু হওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়।
এ পরিস্থিতিতে শনিবার রাফাহ ক্রসিং খুলে দিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। গত কয়দিনে এই ক্রসিং দিয়ে খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশ করলেও জ্বালানি তেলবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি গাজায়।
এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের ভাষ্য, গাজা পুরোপুরি হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং যদি সেখানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়, সেক্ষেত্রে হামাস তা চুরি করে নিজেদের সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করবে।