October 11, 2024, 4:27 am
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ার ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) আলোচিত অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিনকে বদলি করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়। সোমবার মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত আদেশ জানানো হয়।
গত ২৯ আগস্ট থেকে বগুড়ার আইএইচটির শিক্ষার্থীরা নানা অনিয়ম ও কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। এসব কাজের মদদদাতা হিসেবে অধ্যক্ষের অপসারণ ও বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষের বিচারের দাবি তুলেন। এসব আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনের বদলির আদেশ আসে।
বদলির আদেশের চিঠিতে বলা হয়, আইএইচটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আমায়াত-উল-হাসিনকে বাগেরহাটের ম্যাটসের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে বদলি করা হলো। একই সঙ্গে মাদারিপুরের ম্যাটসে সংযুক্ত করা হয়েছে তাকে।
এ ছাড়া বগুড়ার আইএইচটির সিনিয়র লেকচারার মো. ওমর ফারুক মীরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হলো।
বদলির এই আদেশে আরও বলা হয়, আগামি সাত দিনের মধ্যে বদলিকৃত স্থানে যোগদান করতে হবে। না হলে আট কার্যদিবসে স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গন্য হবেন।
বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আমায়াত-উল-হাসিন উত্তেজিত হয়ে বলেন, একজন আসামি এখনও বাইরে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে কেন জিজ্ঞেস করছেন না?
এ সময় তাকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আপনি উপস্থিত ছিলেন কিনা এমন পাল্টা প্রশ্নে তিনি জবাব দেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমিও ছিলাম। আমি আমার রুমে ছিলাম সেই সময়।’
এদিন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বগুড়া আইএইচটিতে আসে। কমিটির সদস্যরা দিনব্যাপী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় ১১ জন শিক্ষার্থীর অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের অল্টারনেটিভ মেডিসিন বিভাগের উপপরিচালক গউসুল আজিম চৌধুরী। অন্য দুজন হলেন ঢাকা আইএইচটির সহকারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান এবং বগুড়া আইএইচটির জুনিয়র প্রভাষক ডা. আব্দুল কাদের।
গউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে আমরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকমণ্ডলীদের সাথে কথা বলেছি। আমাদের সাক্ষাৎকার এখনও চলমান রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করার পর মতামত দিতে পারবো। আমরা চাই এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসুক, শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখুক। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে আমরা তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছি। তদন্ত যেন বিলম্বিত না হয়, আমরা খুব শিগগিরই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জমা দেবো। আমাদের মতামত পাওয়ার পরপরই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
গত ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও হোস্টেলের মিল ম্যানেজার আমিনুল ইসলামকে মারধর করেন সজল কুমার ঘোষ। এই মারধরকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ফুঁসে ওঠে। প্রায় দু ঘণ্টা সড়ক অবরোধ রাখার পর তারা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে উঠে আসে ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষের নানা অপকর্ম ও নির্যাতনের কাহিনী। সেই সঙ্গে কলেজটির অধ্যক্ষ ও শিক্ষকমণ্ডলীর চরম অবহেলা উঠে আসে। এর মধ্যে অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিনের সঙ্গে সজল ঘোষের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও অপকর্মের প্রশ্রয়ের বিষয়গুলো অভিযোগা আকারে তোলেন শিক্ষার্থীরা। যদিও শুরু থেকেই সজল ঘোষের কলেজে অপকর্মের সকল ঘটনা জানার বিষয় অস্বীকার করে আসছেন অধ্যক্ষ। এর এক পর্যায়ে ২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান।
শিক্ষার্থীরা তাদের বিক্ষোভে তিন দফা উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো বহিরাগত সন্ত্রাসীকে আশ্রয় ও প্রশ্রয়দানকারী অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনের অপসারণ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ইভটিজিংকারী সজল ঘোষের গ্রেপ্তার ও শাস্তি এবং সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।