April 23, 2024, 6:37 pm

রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪৭ লাখ টাকার মেশিন চুরি

যমুনা নিউজ বিডিঃ  বাগেরহাটের রামপালে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই। অবকাঠামো নির্মাণের শুরু থেকেই চুরির ঘটনা ঘটছে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থাপনায়। এতদিন বাইরের তামার তার ও মূল্যবান ধাতব বস্তু চুরি হলেও এবার চুরির ঘটনা ঘটেছে প্রকল্প কেন্দ্রের ভেতরে। সম্প্রতি কেন্দ্রের মধ্যে তালাবদ্ধ একটি কক্ষ থেকে ৪৭ লাখ টাকা দামের কয়লা পরীক্ষার মেশিন (BOMB CALORIMETER) চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় গেল ১৬ জানুয়ারি রামপাল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি ও প্রশাসন) মো. অলিউল্লাহ।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গেল ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ও কেমিস্ট আব্দুল মালেক ল্যাব বন্ধ করার সময় টেস্টিং যন্ত্রটি টেবিলের উপরেই ছিল। আব্দুল মালেক চলে যাওয়ার আগে চাবি ল্যাব-১ এর মুসা পারভেজকে দিয়ে ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. সাদ্দাম হোসেন এবং তানভীর রহমানকে দিতে বলেন। কথা মতো, মুসা পারভেজ তাদের চাবি দিয়ে দেন। পরে রাত দশটায় ডিউটিতে আসেন মো. জাকারিয়া আল রাজী এবং মাসুম বিল্লাহ। ১৫ জানুয়ারি সকাল ৭টায় ডিউটি শেষ করেন তারা। এ সময় দায়িত্ব নেন মো. সাদ্দাম হোসেন এবং মোঃ মাসুম বিল্লাহ। সকাল ৯টার দিকে রুম ক্লিনার আব্দুল নোমান ল্যাব-২ পরিষ্কার করতে গিয়ে টেবিলে মেশিন দেখতে না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। ঘটনার ১১দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মেশিন বা চোরের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। মামলার বাদী ও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) মো. অলিউল্লাহ বলেন, চুরির ঘটনায় আমরা মামলা করেছি, কাজ চলছে। এসব বিষয় আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পরীক্ষার মেশিন চুরির ঘটনায় আমাদের তদন্তচলমান। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ এ স্থাপনায় চুরি হওয়ায় কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, কয়লা পরীক্ষার মেশিন সাধারণ মানুষের কোনো কাজে লাগার কথা নয়, ছিঁচকে চোরদের চুরি করারও কথা নয়। বড় কোনো চক্র এবং কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কেউ এতে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া ল্যাব এলাকায় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা লোক থাকার পরেও মামলায় কারও নাম না দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায় এড়ানোর চেষ্টা বলেও মনে করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মাসে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-৬) সদস্যরা অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের ২০ জনকে আটক ও ৫০ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করেন। অপরদিকে, গত নয় মাসে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দায়িত্বরত আনসার ব্যাটালিয়ন খুলনার সদস্যরা ৩৩ জন চোরকে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় ৫৩ লাখ টাকার চোরাই মালামাল উদ্ধার করা হয়। কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য আছেন ১৫০ জন, সাধারণ আনসার ৩০ জন, পুলিশ সদস্য ১৭ জন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভেল-এর নিজস্ব সেন্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মী আছেন ৭৮ জন এবং জেরিন সিকিউরিটি সার্ভিসের আছেন ১৮ জন। কোনো সংস্থার কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এককভাবে দায়িত্ব না থাকায় একদিকে যেমন জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে, অপরদিকে দায়িত্ব স্পষ্ট না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষেরও স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় মানুষের।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD