April 25, 2024, 6:54 pm

অস্ত্রের খোঁজে যশোরের গোয়েন্দা

যশোর প্রতিনিধিঃ  যশোর শহর ও শহরতলীর দুই অস্ত্র কারখানার সন্ধান এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ও অস্ত্র উদ্ধার ঘটনায় যশোরাঞ্চল জুড়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্পট থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একের পর এক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাতেও কয়েকটি অ্যাঙ্গেলে অভিযান ও তদন্ত কার্যক্রম এগুচ্ছে।
ওই দুটি কারাখানা থেকে তৈরি অস্ত্র যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়েছে এমন ধারণাও করছে পুলিশ। এছাড়া আটক হওয়া ৩ জন কারিগরের কাছ থেকে তথ্য আদায় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অস্ত্র গুলো কাদের বা কার কার দখলে রয়েছে তা খুঁজতে হত্যা ডাকাতি ছিনতাই মামলার জামিনে থাকা দাগী অপরাধীদের টার্গেট করা হচ্ছে। ডিবি, র‌্যাব, পিবিআই ও যশোরের ৯ টি থানা পুলিশ অস্ত্র সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছে। খোঁজা হচ্ছে আরো কোনো অস্ত্র কারিগরচক্র আছে কিনা। সেই সাথে খোঁজা হচ্ছে অস্ত্রধারীদের। ১৩ অক্টোবর রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার দিকে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির একটি চৌকস টিম শহরের রাঙামাটি গ্যারেজ এলাকায় একটি অস্ত্র তৈরির কারখানার খোঁজ পান। ওখানে রীতিমু অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম যোগাড় করে অস্ত্র তৈরি হচ্ছিল। নিউ বিসমিল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাইনবোর্ডের অন্তরালে চলছিলো ওই ভয়ানক কারবার। অভিযান চালিয়ে হাতে নাতে আটক করা হয় যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস, সুমন হোসেন এবং শহরের বেজপাড়া এলাকার আজিজুল ইসলামকে ।
ঐ ওয়ার্কসপ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও তৈরির সরঞ্জামাদিতে প্রমাণ দেয় চক্রটি অত্যাধুনিক সব অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহ করে। এই উদ্ধারে বিব্রত হয় গোয়েন্দা শাখাসহ কয়েক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ঐ কারাখানার তৈরি অস্ত্র এর আগে অনেকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ওয়ার্ডার নিয়ে হয়তো বড় কোনো চালান কেনো বিশেষ এলাকায় বা চক্রের কাছে বিক্রি করা হতে পারে। যশোরাঞ্চলে অনেকের কাছে ঐ কারখানার অস্ত্র থাকতে পারে। এই সন্দেহ ও ধারনা থেকে ডিবি পুলিশ জোরালো তদন্ত ও অনুসন্ধান অব্যাহত রাখে। রিমান্ডে আনা হয় ওই কারখানা মালিক আজিজুল ইসলাম ও অস্ত্র কারিগর আব্দুল কুদ্দুসকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ানক তথ্য মেলে। তারা জানায়, কারাখানার মাটির নিচে পোতা অস্ত্র তৈরি করার আরো সরঞ্জাম। এরপর ২১ অক্টোবর মাটির নিচ থেকে উদ্ধার হয় ১টি পিস্তল বডি, পিস্তলের রাইড, পিস্তলের ব্যারেল ২টা, টিগার ২ টা, হেমার ২টা, ছোট স্প্রিং ২টা। ওই ঘটনার পর গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারি বাড়িয়ে দেয় যশোরাঞ্চলে। ২৩ অক্টোবর রাতে যশোরের চাঁচড়া ভাতুড়িয়া এলাকায় একটি অস্ত্র কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। অস্ত্রসহ ইকবাল হোসেন নামে এক কারিগর আটক হয়। সে চাঁচড়া ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। পূর্বপাড়া থেকে ইকবাল হোসেনকে ১টি ওয়ান শুটারগানসহ আটক করা হলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে কারখানার তথ্য জানায়। চাঁচড়ার মধ্যপাড়ার মকছেদের পুকুরের পাশ থেকে মাটি খুঁড়ে আর ১টি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার হয়। এরপর চাঁচড়া ভাতুড়িয়ার দাড়িপাড়ায় তার বাড়ির খাটের নিচ থেকে ২টি ওয়ান শুটারগানের গ্রিপ, ২টি স্টিলের পাত, ১টি ব্যারেল, ৪টি পাইপ, ১টি বড় ব্যারেল পাইপ, দুটি লোহার ট্রিগারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এতে গোয়েন্দা শাখা নিশ্চিত হয় এই ইকবাল একজন প্রশিক্ষিত অস্ত্র কারিগর, সে কারখানা চালায়।
যশোর থেকে দুই অস্ত্র কারখানার সন্ধান এবং বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম ও অস্ত্র উদ্ধার ঘটনায় জেলাব্যাপি জোরালো অভিযান শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। বিশেষ করে ধারনা করা হচ্ছে ওই দুটি কারখানা ও কারিগরদের কাছ থেকে অল্প দামে অনেকেই অস্ত্র কিনতে পারে এবং তারা বিভিন্ন গ্রুপ কিংবা অপরাধী সিন্ডিকেটের ওয়ার্ডারেও কাজ করে এমন সন্দেহ করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা ছাড়াও হত্যা ডাকাতি ছিনতাই মামলায় জামিনে আসা দাগী আসামিদের টার্গেট করছে পুলিশ। তারা অস্ত্র দখলে রাখতে পারে, আবার রাজনৈতিক সেল্টারে থাকা উঠতি স্থানীয় রাজনীতিক ও উঠতি দুর্বৃত্তদের হাতে ওই অস্ত্র চলে যেতে পারে সে শঙ্কা থেকেও তদন্ত এগুচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় যশোরের আলোচিত সন্ত্রাসী ১৫ মামলার আসামি পিচ্চি রাজা এক সহযোগীসহ আটক হয় অস্ত্রসহ। ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে কোতোয়ালি থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে যশোর শহরের এই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীকে সাগরেদসহ আটক করেছে। শহরের ষষ্টিতলাপাড়া রেলগেট প্রাইভেট স্ট্যান্ডের কালামের চায়ের দোকানের সামনে থেকে পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী রাজা ওরফে পিচ্চি রাজা ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিনকে একটি ওয়ান শুটারগান, এক রাউন্ড কার্তুজসহ আটক করা হয়। এছাড়া রাঙামাটি গ্যারেজ এলাকার অস্ত্র কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর যশোরের ৯ টি থানা পুলিশ আরো কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে দাগী আসামিসহ। রাঙামাটি গ্যারেজ এলাকার নিউ বিসমিল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার সাথে ভাতুড়িয়ার দেয়াপাড়ার কারখানার যোগসুত্রতা থাকরে পারে, ঘটনার আগে পরে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র গুলির যোগসূত্রতা থাকতে পারে ধারনা করছে পুলিশ।
সম্প্রতি যশোরাঞ্চলে কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে যাওয়ায় ওই অস্ত্র কারখানা থেকে সরবরাহ করা অস্ত্রের ব্যবহার হতে পারে বলেও শঙ্কা বাড়ছে। যে কারণে আইনশৃংখলা বাহিনীর নজর এখন ওইসব অবৈধ অস্ত্রের দিকে। সব মিলিয়ে যশোরাঞ্চল থেকে আরো অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারী আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে ডিবির ওসি রুপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, সন্ধান পাওয়া দুটি অস্ত্র কারখানা ও আটককৃতদের নিয়ে আরো অনুসন্ধান চলছে। ওই কারখানায় কাদের চলাচল ছিল। ওই অস্ত্রের কাঁচামাল কোথা থেকে আনা হয়েছে। কোথায় বিক্রির উদ্দেশ্যে এ অস্ত্র বানানো হয়েছিল, আগে কারা কারা ওখান থেকে অস্ত্র কিনেছে এসব নিয়ে কাজ চলছে। যশোরাঞ্চলে অনেক দাগী বা চক্রের কাছে অস্ত্র চলে যেতে পারে সে প্রশ্নেও অভিযান ও তদন্ত এগুচ্ছে।
যশোর কোতোয়ালি থানা অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানান, কারিগরসহ অস্ত্র উদ্ধার ও কারখানার সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় যে মামলা হয়েছে তার তদন্ত চলছে। এছাড়া নতুন করে অস্ত্রসহ আরো কয়েক অপরাধী আটক হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে অস্ত্রের উৎস জানার চেষ্টা হচ্ছে। যশোরে অস্ত্রবাজ চাঁদাবাজসহ কোনো অপরাধীর ছাড় নেই। এ ব্যাপারে অস্ত্র কারখানার সন্ধান ও অস্ত্রসহ কারিগর আটক সংক্রান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সোলাইমান আক্কাস জানিয়েছেন, ঐ অস্ত্র তৈরির কারিগর থেকে কারা কারা অস্ত্র কিনেছে, কার বা কাদের কাদের দখলে অস্ত্র আছে তা খুঁজে বের করা হবে। যশোর তথা দেশের বিভিন স্পট উত্তপ্ত করতে নাশকতা করতে এই অস্ত্র কাজে লাগানোর প্রচেষ্টায় যারা ছিল সবাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ওই দুটি কারখানার অস্ত্র কোথায় কোথায় বিক্রি করা হয়েছে সেই তথ্য আদায় করার চেষ্টা করা হবে রিমান্ডের সময় আটককৃতদের কাছ থেকে। এ ব্যাপারে ডিবি ছাড়াও পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD