September 18, 2024, 3:57 pm

বগুড়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ৪ বিএনপি নেতাকে শোকজ

বগুড়া (সদর) প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ৪জন বিএনপি নেতাকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। “দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আপনার বিরুদ্ধে কেন গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা মোতাবেক কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না”- এই মর্মে আগামী ৩ দিনের মধ্য লিখিত জবাব চেয়ে শোকজ নোটিশ করা হয়েছে। বিএনপির এই ৪ জন নেতা হলেন, বগুড়া সদর উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সহিদুল ইসলাম সরকার, এরুলিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক, লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিঃ মোঃ আপেল মাহমুদ এবং সাবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি, বর্তমান নির্বাহী সদস্য ফরিদ উদ্দীন সরকার। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বগুড়া জেলা শাখার আহবায়ক রেজাউল করিম বাদশা, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডঃ একেএম সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল এবং যুগ্ম আহবায়ক মোশারফ হোসেন এমপি স্বাক্ষরিত এই শোকজ নোটিশে ঐ ৪ জন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনয়ন করা হয়েছে।
শোকজ নোটিশে উল্লেখ করা হয়,- “আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য জেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২২ইং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্জন করেছে। তথাপিও আপনারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে গত ২৬ শে সেপ্টেম্বর/২০২২ইং তারিখে আওয়ামীলীগ মনোনীত সদস্য প্রার্থী, বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামিলীগ এর সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম রাজ ও মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী মাহফুজা খানম লিপির পক্ষ নিয়ে এবং সদর উপজেলা আওয়ামিলীগ এর সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিক এর নেতৃত্বে বগুড়ার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উক্ত প্রার্থীদ্বয়ের প্রতীক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আপনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেন দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৫ (গ) ধারা মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা তাহার সন্তোষজনক উত্তর কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রাপ্তির ৩ দিনের মধ্য বগুড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক/সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বরাবর লিখিত ভাবে জানাবেন। ব্যার্থতায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে একতরফা ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”।
তবে নিশিন্দারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও নিশিন্দারা ইউপি চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম সরকার বাকী ৩ জনকে ছাড়িয়ে আরো একধাপ উপরে উঠেছেন। তাকে পাঠানো শোকজ নোটিশে উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও আরো কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সহিদুল ইসলাম সরকারকে পাঠানো নোটিশে আরো বলা হয়েছে,- “এছাড়াও গত ১লা অক্টোবর/২০২২ ইং, শনিবার, বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ডাঃ মকবুল হোসেন, আওয়ামিলীগ মনোনীত সদস্য প্রার্থী মাফুজুল ইসলাম রাজ, আওয়ামিলীগ মনোনীত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী মাহফুজা খানম লিপি’র পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসাবে বগুড়া সদর উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং উক্ত আওয়ামিলীগ প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য রাখেন”। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলেন,” হামাকেরে সহিদুল চেয়ারম্যান বিএনপি না আওয়ামিলীগ তা বুঝা যায় না। বিএনপির থেকে লমিনেশন পায় দেকেই তো বারবার চেয়ারম্যান হচে কিন্তু তাই কোমা অন্যদলের হয়ে কাজ কাম বেশি করে, কিসোক যে ইংকে করে বুঝিনে বাপু”। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশিন্দারা ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, নিশিন্দারা ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি দলীয় অবদানের কারণে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও দুঃখজনকভাবে সে বিজয়ী হওয়ার পর অন্যদলের এজেন্ট হিসাবে কাজ করে থাকে। তাদের এজেন্ডা গুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পালন করে। সে অন্যদলের লোকদের সাথে লিয়াজু করে চলার কারণে নিশিন্দারা ইউনিয়নে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্য দ্বিধা দ্বন্দ দেখা দিয়েছে। কর্মীরা তার কারণে সঠিক নেতৃত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আছে”।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ও বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, শোকজ পাওয়া অন্যান্য বিএনপি নেতাদের চেয়ে নিশিন্দারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সহিদুল ইসলাম সরকার সরকার দলীয় ব্যক্তিদের সাথে বেশি লিয়াজু করে চলেন। এজন্য তিনি বারবার খবরের শিরোনামও হয়েছেন। কিন্তু দল থেকে তার বিরুদ্ধে তেমন দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি তার এই সুবিধাবাদী কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছিলেন। গত আগস্ট/২০২২ ইং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন সদর উপজেলা আওয়ামিলীগ। সেখানেও সহিদুল ইসলাম সরকার উপস্থিত থেকে মুনাজাতে অংশ নেন। এর আগে তিনি বিএনপি থেকে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়ে প্রথমেই তিনি সদর উপজেলা আওয়ামিলীগ এর সভাপতির কাছে যেয়ে পুস্পমাল্য পড়িয়ে দিয়ে এবং গ্রহণ করেন যা পরবর্তীতে বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করাব হলে ভাইরাল হয় এবং বিভিন্ন মহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডঃ একেএম সাইফুল ইসলাম সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “তারা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছেন বলে আমাদের মনে হয়েছে তাই জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়েছে এবং ৩ দিনের মধ্য তা লিখিত আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে”।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD