October 14, 2024, 4:52 am
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার ৪ বছর পর বগুড়া শহরে প্রবেশপথে করতোয়া নদীর উপর পরিত্যক্ত ফতেহ আলী সেতু পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি টাকা। দৃষ্টিনন্দন করতে সেতুটি হবে মোট ৪০ ফুট প্রশস্ত।
নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছে বগুড়া সড়ক বিভাগ। আগামী শুষ্ক মৌসুমে (নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরে) নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সেতুটি হবে দৃষ্টিনন্দন। এই সেতু পূর্ব বগুড়ার তিন উপজেলার প্রায় কয়েক লাখ মানুষের স্বপ্নের সেতু। সেতুটি নির্মাণ হলে বগুড়ার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।
জানা যায়, ১৯৬২ সালে করতোয়া নদীর ওপর ৬৮ মিটার দীর্ঘ ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সে সময় সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। মাঝে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেতুটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ স্বাধীনতার পর সেটি মেরামত করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো সংস্কার না থাকায় দিনদিন ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। জেলা শহরের সাথে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলী উপজেলাবাসী এই সেতু হয়ে সরাসরি যোগাযোগ করে থাকে। পূর্ব বগুড়ার কয়েক লাখ মানুষের চলাচলের ভরসা হলো এই ফতেহ আলী সেতু।
সেতুটি তিনটি উপজেলাসহ সদর উপজেলার মানুষের চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে আসছে। তিনটি উপজেলার সাধারণ মানুষের যেমন চলাচলের ভরসা, তেমনি কৃষিপণ্যসহ সকল প্রকার যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সেতু দিয়ে তিন উপজেলার কৃষি পণ্য পরিবহনে ভূমিকা রয়েছে। সেতুটি এলাকার অর্থনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করে দিয়েছে। সেতুটি ২০১৮ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে বগুড়া সড়ক বিভাগ। এরপর থেকে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারী যানবাহন চলাচল করে ৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে। ভারী যানবাহন চলাচলে অন্য সড়ক ব্যবহার হলেও রয়েছে নানা দুর্ভোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার উন্নয়নের মধ্যে এবার বগুড়ার এই সেতু নির্মাণ হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণ হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে।
বগুড়া শহরে চলাচলকারী কামরুজ্জামান জানান, ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে পূর্ব বগুড়া থেকে বগুড়া জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কয়েক কিলোমিটার ঘুরে চলাচলের ক্ষেত্রে ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে নানা দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
সিএনজি চালক খোরশেদ আলম জানান, সড়ক বিভাগ থেকে সেতুটির দুই পাশে খুঁটি দিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছে। এতে করে সিএনজিও পার হতে পারে না। সিএনজি পারাপারে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। সেক্ষেত্রে ঘুরে আসার পথটিও সরু। সে পথে ভারী যানবাহন ও অন্যান্য বাস চলাচলের কারণে যানজটেরও সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
বগুড়া বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সেতুটি নির্মাণের জন্য সড়ক বিভাগ অনুমোদন পেয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি টাকা। সেতুটি পুনর্নির্মাণ করা হলে ভারী যানবাহন চলাচল সহজ হবে। এই সেতু লম্বায় হবে ৬৮ ফুট। সেতুটি মোট চওড়া হবে ৪০ ফুট। এর মধ্যে সেতুর দুই পাশে ৮ ফুট করে ফুটপাত হবে। যে পথ দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করবে। আর মাঝের ২৪ ফুট দিয়ে অন্যান্য যানবাহনসহ ভারী যানবাহন চলাচল করবে। সেতুটির নকশা তৈরি করে ইতিমধ্যে মন্ত্রাণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সেতুটির নকশা ও অর্থ বরাদ্দ প্রদান অনুমোদন করেছে। সেতুটির নির্মাণ কাজের জন্য দ্রুততম সময়ে দরপত্র আহ্বান করে আসছে নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। এই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে আগামী ২০২৩ সালের জুন মাসে। সেতুটি দৃষ্টিনন্দন করার পাশাপাশি আধুনিকভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে।
বগুড়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, ২০২১ সালে সেতুটি নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়। পরে সে প্রস্তাবনাটি চলতি বছরের ৩১ জুলাই অনুমোদন করা হয়। যত দ্রুত সম্ভব সেতুটির কাজ শুরু করা হবে। এটি বগুড়াবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতু। এই সেতু হবে দৃষ্টিনন্দন। সাধারণ মানুষের জন্য আনন্দের যোগানও দেবে। সেতুর দুইপাশে নদীর পাড় বাঁধায় করা হবে। যেন সেতুটি দীর্ঘদিন টেকসই হয়। সেতু নির্মাণকালে বর্তমান সেতুর পাশ দিয়ে একটি পায়ে চলাচলের সড়ক নির্মাণ করা হবে। যেন আপাতত সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করতে পারে।