April 24, 2024, 2:09 pm

বগুড়ায় নওফেল হত্যার রহস্য উন্মোচন, খুন হয় বন্ধুর হাতে

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নওফেল শেখ (১৪) হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের জন্য বন্ধুর হাতে খুন হয় নওফেল শেখ। এ ঘটনায় খুনী বন্ধু (অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর)কে সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত কিশোরের বাড়ী শাজাহানপুর হলেও ঢাকায় তার বড় ভাইয়ের সাথে লন্ড্রীর দোকানে কাজ করতো। খুনের ঘটনার পর মোবাইল বিক্রির কাজে জড়িত ও ওই কিশোরের কথিত বান্ধবী শেরপুরের জাকিয়া খাতুন বৃষ্টি (২০) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে গত ২০ জুন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শাজাহানপুরের খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা গ্রামের জঙ্গল থেকে নওফেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে উপজেলার খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা হাটপাড়া গ্রামের ইসরাফিলের ছেলে এবং দাড়িগাছা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে রহস্য উন্মোচন করেন বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। এসময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) হেলেনা খাতুন এবং শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন।

প্রেস কনফারেন্সে পুলিশ সুপার জানান, নওফেল এবং খুনী কিশোর একে অপরের বন্ধু ছিল। তারা প্রায়ই এক সাথে চলাফেরা এবং দাড়িগাছা গ্রাম হইতে অনুমান ২ কিলোমিটার দূরে একটি জঙ্গলে গিয়ে তারা মাঝেমধ্যে ধূমপান করতো। প্রায় দুই মাস আগে নওফেলের বাবা শখের বশে জমি বিক্রির টাকা দিয়ে নওফেলকে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল কিনে দেয়। নওফেলের সেই নতুন ফোন কিভাবে পাওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করতে থাকে ওই কিশোর। গত ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন থাকায় ওই কিশোর নওফেলকে জঙ্গলে গিয়ে ধুমপান করে একটু আনন্দ ফুর্তি করে আসার প্রস্তাব দেয়। সেই দিন নওফেলের জন্মদিন থাকায় নওফেল উৎফুল্ল ছিল এবং সে তার কথায় রাজি হয়ে সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছলে ওই কিশোর নওফেলকে হত্যা করে সেই স্মার্ট ফোনটি পাওয়ার পরিকল্পনা মাফিক তার গলায় পূর্ব থেকেই একটি মাপলার রাখে।

নওফেল জঙ্গলের একটি গাছের সাথে হেলান দিয়ে ধুমপান করার একপর্যায়ে ওই কিশোর তার গলায় থাকা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা মাপলার হাতে নিয়ে নওফেলকে বলে, ‘মামা তোমাকে যদি এই মাপলার দিয়ে সিনেমার স্টাইলে খুন করা হয় তাহলে কেমন হবে। তখন নওফেল হেসে বলে যে, মামা তুমিতো আমকে খুন করবে না।‘ তখন অভিনয়ের ছলে ওই কিশোর মাপলার দিয়ে নওফেলের গলায় দুটি প্যাচ দিয়ে গাছের সাথে শক্ত করে পিছন দিক থেকে টেনে ধরে। এতে নওফেল ছটফট করতে থাকে এবং একপর্যায়ে নওফেল মারা যায়। এতে নওফেল নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পরে গেলে তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাশের জমিতে থাকা একটি বাঁশের লাঠি নিয়ে এসে নওফেলের মাথায় পরপর দুটি বারি দেয়। এতে নওফেল নড়াচড়া না করলে ওই কিশোর নিশ্চিত হয় যে, নওফেল মারা গেছে। তখন ওই কিশোর ঘটনাস্থল থেকে ১০ থেকে ১৫ হাত দূরে ঝোপের ভিতর নওফেলের লাশ টেনে নিয়ে গুম করে রাখে। অতঃপর নওফেলের স্মার্ট ফোনটি নিয়ে সকলের অগোচরে চলে যায় ওই কিশোর।

পুলিশ সুপার বলেন, খুনের ওইদিন দুপুর একটার দিকে ওই কিশোর তার বান্ধবী বৃষ্টিকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে বগুড়া শহরের সাতমাথা একটি পুরাতন মোবাইল ফোন ক্রয়-বিক্রয়ের দোকানে গিয়ে তারা ভাই-বোনের পরিচয় নিয়ে নিজেদের অভাব অনটনের কথা বলে নওফেলের ওই ফোন ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকে তারা দুইজন বগুড়া শহরের গালাপট্টিতে অবস্থিত একটি হোটেলে মোবাইল বিক্রির ২ হাজার টাকা দিয়ে একটি রুম ভাড়া করে সময় কাটায়। পরে ওই কিশোর তার এক বন্ধুকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই মেয়ের সাথে সময় কাটানোর জন্য আসতে বলে। পরে মোবাইল বিক্রির দেড় হাজার টাকা বৃষ্টিকে দিয়ে তারা যার যার এলাকায় চলে যায়।

পরে ২০ জুন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা গ্রামের জঙ্গল থেকে নওফেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লে খুনী ওই কিশোর ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে। পরে পুলিশের ব্যাপক অভিযানে ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে ২৭ জুন দুপুর দেড়টার দিকে খুনী ওই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয় এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত সেই মাপলার উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কিশোরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও মোবাইল বিক্রিতে সহায়তাকারী নারী বৃষ্টিকেও আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD