July 27, 2024, 5:57 am

ব্রহ্মপুত্রের চরে গাড়ল পালনে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন

যমুনা নিউজ বিডিঃ গাড়লের খামার গড়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্য। উপজেলার চর শাখাহাতিতে শতাধিক গাড়ল নিয়ে এই খামার গড়েছেন তিনি। খামারে পালিত গাড়ল বেচে তিনি প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা সদস্যের নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট বলে জানা গেছে। গত বছরের শেষ দিকে তিনি নিজ বাড়িতে গাড়লের খামার গড়ে তোলেন।

প্রাণি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাড়ল দেখতে অনেকটা ভেড়ার মতো। তবে এরা আকারে এবং ওজনে ভেড়ার চেয়েও বড়। এরা আসলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগপুরের ভেড়ার ক্রস ব্রিড। এরা মাত্র এক বছর বয়স থেকে বাচ্চা দেওয়া শুরু করে। সাধারণত বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্রের শাখাহাতির চরে গিয়ে দেখা যায়, চরজুড়ে শতাধিক গাড়ল বিচরণ করছে। সাথে থাকা রাখাল সোহেল রানা জানলেন এগুলো সাবেক সেনা সদস্য রফিকুলের। এরপর কথা হয় রফিকুলের সাথে। তার গাড়োলের খামারে গিয়ে দেখা গেল, খামারে টিন শেডের ঘর। সেখানে গাড়ল থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে মাঁচান। গাড়লের খাবারের বাড়তি চাহিদা মেটানোর জন্য খামারের পাশেই রয়েছে ঘাসের আবাদ। রফিকুল জানান, খামার করতে গেলে প্রথমে প্রযোজন সঠিক পরিকল্পনা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি গাড়লের খামাড় গড়ে তোলেন।  প্রথম দফায় মেহেরপুরের এক খামারির মাধ্যমে তিনি  ভারত থেকে নিয়ে আসা ৫২টি গাড়ল নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬ টি সহ ৮৭টি গাড়ল নিয়ে তার খামারের যাত্রা শুরু। এর মধ্যে অধিকাংশিই ছিল বাচ্চা। পরে দুই মাসেই খামার থেকে আয় শুরু করেছেন । গত ৮ মাসের এই খামার থেকে তিনি ১৪ টি বাচ্চা গাড়ল ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন তার খামারে ১০২টি গাড়ল রয়েছে।

রফিকুল আরও জানান, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার সময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন গরু ও ভেড়ার খামার করার। পরে গাড়ল সম্পর্কে জেনে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গাড়লের খামার গড়ে তোলেন। এজন্য তিনি দেশের অর্ধশতাধিক খামার ঘুরে হাতে কলমে গাড়ল পালন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। তার খামারের গাড়লের যাবতীয় পরিচর্যা ও চিকিৎসা তিনি নিজেই করেন। এই খামারি বলেন, ‘গাড়ল ছাগল বা ভেড়ার চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক। কুড়িগ্রামের আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি গাড়ল পালনের জন্য উপযোগী। আমাদের চরে যেসকল ঘাস হয় তা গাড়লের পছন্দের খাবার। আর এর মাংস ও দাম ভেড়ার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে এর খামার লাভজনক।’ ‘একটি বাচ্চা ভেড়ার দাম ১২ শ’ থেকে ১৫ শ’ টাকা। কিন্তু একটি গাড়লের বাচ্চার দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। একটি ভেড়া সর্বোচ্চ ৩০ কেজি হতে পারে। কিন্তু একটি খাবার উপযোগী গাড়ল ৪০ কেজি থেকে ১২০ কেজি ওজনের হতে পারে।  আমার নিজের খামারেই ৭৮ কেজি ওজনের গাড়ল রয়েছে।’ গাড়ল পালনে সুবিধা নিয়ে বলেন খামারি রফিকুল। রফিকুল বলেন, ‘ বর্তমানে আমার খামারে যে ১০২ টি  গাড়ল রয়েছে তার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৮ লাখ টাকা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে আগামী এক বছরে এর থেকে মূলধন বাদে আরও অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা লাভ হতে পারে ইনশাআল্লাহ।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গাড়ল পালন অত্যন্ত লাভজনক। কুড়িগ্রামের ভূ-প্রকৃতি গাড়ল পালনের জন্য উপযোগী। এর মাংসের পরিমাণ অনেক বেশি। আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি গাড়ল পালনে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।’

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD