October 11, 2024, 5:21 am
ষ্টাফ রিপোর্টার: আর মাত্র কয়েকদিন পর শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবীর আগমনকে ঘিরে বগুড়ায় মন্ডপে-মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ, ব্যস্ত জেলার মৃৎশিল্পের কারিগররা। কাঁদা মাটি আর হাতের ছোঁয়ায় জেলার প্রতিটি উপজেলার মন্দির গুলোতে চলছে কাঠামো তৈরীর কাজ। প্রতিমার প্রতিরূপ ফুটে তোলার কর্মে ব্যস্ত রয়েছেন শিল্পীরা। জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলায় নানা আয়োজনে শারদীয় দুর্গাপুজার প্রস্তুতি চলছে বেশ জোরেসোরে। শিল্পীদের হাতের কারুকাজে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশসহ নানা প্রতিমাকে। কারিগররা ৮ থেকে ১০টি করে প্রতিমা নিয়ে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। কোথাও প্রতিমার কাঠামো তৈরী করে মাটি ভরাট করে যাচ্ছেন। কোথাও প্রতিমার প্রতিরূপ ফুটে তোলার কর্মে ব্যস্ত রয়েছেন, আবার কোথাও বাকী রেখেছেন শুধু রঙের কাজ। কে কত ভালো প্রতিমা তৈরি করে ভক্তদের হৃদয় ছুঁতে পারেন তারই প্রতিযোগিতা চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে। সামর্থ্য অনুযায়ী স্থানীয় ও অন্য জেলা থেকে কারিগর এনে প্রতিমা তৈরি করাচ্ছেন পূজা কমিটির আয়োজকরা। তবে নিত্যপণ্যের সাথে বেড়েছে খড়, মাটিসহ অন্যান্য উপকরণের দাম। এবার ২৫ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমা তৈরী করছেন শিল্পীরা। সরেজমিনে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ার নববৃন্দবন হরিবাসর মন্দির ঘুরে দেখা যায়, দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। বিশেষ করে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেশ জোরেসোরে কাজ করতে দেখা গেছে তাঁদের। জানতে চাইলে প্রতিমা কারিগর অনিল পাল জানান, তিন মাস আগে থেকে অর্ডার অনুযায়ি প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। এখনও অনেকেই আসছেন। তবে এখন আর অর্ডার নেয়া হচ্ছে না। যে প্রতিমাগুলোর কাজ শুরু করেছেন সেগুলোরই কাজ প্রায় শেষ। এরপরই রঙের কাজ শুরু হবে। এবার পূজায় তার তৈরি একেকটি প্রতিমা ২৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে। এদিকে দুর্গাপূজার খুব বেশি দেরি না থাকায় বগুড়ায় অনেকেই শুরু করেছেন কেনাকাটা। বগুড়া শহরের নিউ মার্কেট, জলেশ্বরীতলা, রানার প্লাজা, আলতাফ আলী সুপার মার্কেট, আল-আমিন কমপ্লেক্স, হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপনী বিতানগুলোতে পূজার কেনাকাটা করতে ভিড় বেড়েছে আগের থেকে দিগুণ। অপরদিকে, দেবী দুর্গাকে ঢাঁক, ঢোল, উলু আর শঙ্খ ধ্বনিতে বরণ করতে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছেন ভক্তকুল। এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে বগুড়ায় বরাবরের মতো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে শহরের বিভিন্ন সড়কে যানজটমুক্ত, মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক অবস্থায় থাকার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং দুর্গাপূজাকে সার্বজনীন করে তুলতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশও করা হচ্ছে। বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার মো. জেদান আল মুসা জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নির্বিঘ্নে উৎসবমূখর পরিবেশে পূজা সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। পূজা মন্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকবে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয়। কেউ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। নিরাপত্তার জন্য মন্ডপে মন্ডপে বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা। বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, বগুড়ার সবকটি উপজেলায় শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে শারদীয় দূর্গাপূজা সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। প্রতিমা তৈরির সময়ে যাতে প্রতিমার কোনো প্রকার ক্ষতি না হয়, সেজন্য আয়োজক কমিটিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আশা করছি প্রতি বছরের মতো এবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে বগুড়ায় শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে।