October 13, 2024, 1:20 pm

News Headline :
খালেদা জিয়াকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনার নামে মামলা রোহিঙ্গা সংকট একটি তাজা টাইম বোমা: ড. ইউনূস বগুড়ায় মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে গণমানুষের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে হবে-উপাচার্য ওবায়দুল ইসলাম নন্দীগ্রামে বিএনপির মামলায়  যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৪  বগুড়ায় হেল্প ব্লাড ডোনেশন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বেচ্ছাসেবী মিলন মেলা অনুষ্ঠিত ভারত ছাড়ছেন শেখ হাসিনা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দ্বারপ্রান্তে: ট্রাম্প আজ ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র সংস্কারে ৫ কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন

ইতিহাসের সাক্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১১০ বছরে পদার্পণ

যমুনা নিউজ বিডি: ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতু উদ্বোধনকালে সেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেলস্ আবেগভরে বলেছিলেন, ‘যে সেতু নির্মাণ করে গেলাম উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এ সেতু চিরযৌবনা হয়ে থাকবে।’ কথাটি যে কতখানি সত্য, তার প্রমাণ ১০৯ বছর আগে পদ্মা নদীর বুকে তৈরি করা এই ব্রিজটি শতবর্ষ পেরিয়ে ১১০ বছরে পদার্পণ করলেও সেতুর গায়ে বার্ধক্যের কোনো ছাপ পড়েনি। অনেক শাসক-শোষক ও প্রজন্মের সাক্ষী হয়ে শতবর্ষ পেরিয়ে আজও বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।

১০৯ বছর আগে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর বুকে তৈরি করা হয়েছিল এই ব্রিজটি। তখন পদ্মার ছিল ভরা যৌবন। পদ্মার যৌবন এখন শেষ হতে চলেছে। কিন্তু চিরযৌবনা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পদ্মার বুকে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের অন্যতম সেতুবন্ধ তৈরি করেছে ঐতিহাসিক এই ব্রিজটি। পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলাকে সংযুক্তকারী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ একসময়ে ছিল বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেলসেতু।

ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনের ইতিহাস রয়েছে। ১৮৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কলকাতার সঙ্গে আসাম, ত্রিপুরাসহ উত্তরাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব করেছিল। সে সময়ে প্রস্তাবটি কার্যকরী না হলেও কয়েক দশক পর ১৯০৯ সাল থেকে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ব্রিজ নির্মাণের সময় ছিল ১৯০৯ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত।

প্রায় ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্মিত হয় ব্রিজটি। তৎকালীন হিসাব অনুযায়ী নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ রুপি। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়েছিল হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫ হাজার ৮৯৪ ফুট বা ১.৮ কিলোমিটার। এর ওপরে রয়েছে দুটি ব্রডগেজ রেললাইন। ব্রিজটির নকশা করেছিলেন আলেকজান্ডার মেয়াডোস রেন্ডেল। ব্রিজে স্প্যান রয়েছে মোট ১৫টি, প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি ১৯১৫ সালের আজকের এই ৪ মার্চে চালু হয়েছিল ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনী ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্যাংক, যুদ্ধসরঞ্জামসহ সৈন্যও পারাপার করত। ১৩ ডিসেম্বর পাকবাহিনীকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে মিত্রবাহিনী বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করলে ১২ নম্বর স্প্যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর যথারীতি ভারত সরকার ব্রিজটিকে মেরামত করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনে। এরপর ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর থেকে পুনরায় ব্রিজটির ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’সহ বিভিন্ন ট্রেন ৪০ বছর ধরে চালাচ্ছেন এল এম (ড্রাইভার) তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হলেও এখন ৪০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। তবে আগের মতোই চলছি, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় অস্বাভাবিক কিছু অনুভূত হয় না।

গত ২০১৫ সালে ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের শতবর্ষ পূরণ হয়। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) বীরবল মন্ডল জানান, ২০১৫ সালে শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, লৌহকাঠামোর রাসায়নিক ধাতুর গুণাবলি আরও ২৫ বছর বলবত থাকবে। ফলে ব্রিজ ২০৪০ সাল পর্যন্ত কার্যকরী থাকছে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ব্রিজ রং করার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়। ইতিমধ্যেই সরকার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ৩০০ মিটার অদূরে উজানে নতুন করে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।

শৈল্পিক কারুকার্যে খচিত বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক লাল রঙা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ১০৯ বছর পেরিয়ে এখনো দর্শনার্থীদের মন আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করে চলেছে। ব্রিজটির পাশ দিয়েই ২০০৪ সালে তৈরি হয়েছে ‘লালন শাহ সেতু’ নামে একটি সড়কসেতু, যা পদ্মার বুকে ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সঙ্গে এক অপরূপ সৌন্দর্যে মিলেমিশে রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD