নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌর শহরে দিনের বেলায় মোবাইল প্যালেসে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় লুণ্ঠিত আংশিক মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ইয়াছিন আরাফাত মোল্লা (৩১) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর পশ্চিমপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে।
গতকাল রোববার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নন্দীগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক জিয়াউর রহমান জিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গত শনিবার চোর চক্রের সদস্যকে আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন বিচারক। ওই আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। গত শুক্রবার রাতে কোতয়ালী থানা এলাকার কুমিল্লা সিটির ১৭নং ওয়ার্ডের তেলিকোনা মা-মনি হাসপাতালের সামনে থেকে চোর চক্রের সদস্য ইয়াছিন আরাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার হাতে থাকা একটি ব্যাগ তল্লাশি করে লুন্ঠিত মালামালের মধ্যে ৫টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
এরআগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে নন্দীগ্রাম পৌর শহরের জনতা মার্কেটে মা মোবাইল প্যালেসে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে। চোর চক্র দোকানের তালা কেটে নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমান মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে গত শুক্রবার মা মোবাইল প্যালেসের মালিক খালিদ হাসান আকাশ বাদী হয়ে ৯জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন।
গ্রেপ্তারকৃত ইয়াছিন আরাফাতের বিরুদ্ধে ঢাকা, ভোলা, গাজীপুর ও কুমিল্লার বিভিন্ন থানার ৬টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
চোর চক্রের অন্য সদস্যরা হলো- কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঁশকাইট (বর্তমান সুরনন্দি-সার্মাকান্দা) এলাকার কাশেম আলী (৪৫), একই উপজেলার কামাল্লা এলাকার শরিফুল ইসলাম অরফে জামাই শরীফ (২৯), শোলা পুকুরিয়ার ইকবাল হোসেন (৩৩), তিতাস উপজেলার মাছিমপুরের (বর্তমান কোতয়ালীর সেন্ট্রাল জেল সংলগ্ন) এলাকার ফারুক হোসেন (৩২), চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাতিরবন্দ (মুছা হাজীর বাড়ি) এলাকার মহরম মজিব (২৬), একই উপজেলার সাচার হাতির বোন মুছা হাজীর বাড়ি এলাকার মনু মিয়া ওরফে মানিক (২৭), নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মধ্যনগর-চর এলাকার মোকারাম হোসেন রুবেল ওরফে মনির ওরফে মনু (৩৩) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কালামুড়িয়া মাজার-বাড়ি পশ্চিমপাড়ার সোহেল ওরফে মোটা সোহেল (৩১)।
পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে অপরাধীদের সনাক্ত করা হয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ বড় চোর চক্রের সদস্য। দেশের বিভিন্ন এলাকায় জুয়েলার্স, মোবাইল ও বিকাশের দোকানসহ বড় দোকানে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। তাঁরা ১০মিনিটের ব্যবধানে লুট করে চলে যায়। চক্রের সদস্যরা কৌশলগত কারণে ভ্রাম্যমাণভাবে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে এবং তাঁদের মোবাইল ফোনে সীম ব্যবহার করা হয় না। হোয়াটসঅ্যাপ-ইমুতে চুরির পরিকল্পনা ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে। সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা চুরির জন্য প্রথমে এলাকা এবং দোকান টার্গেট করে। এরপর ভিডিও ধারণ করে নিয়ে চলে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী চোর চক্রের সদস্যরা দোকানে যায়। তালা কাটার সময় লোকজনের চোখ ফাঁকি দিতে লুঙ্গি ও ছাতা ব্যবহার করে। চক্রের ২/৩জন সদস্য দোকানে ঢুকে চুরি করে আর বাকি সদস্যরা বাইরে পাহারায় থাকে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়া আরও জানান, চক্রের সদস্যরা কৌশল করে ২২ ফেব্রুয়ারি একটি পাবলিক বাসে নন্দীগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় থেকে আরেকটি পরিবহনে নন্দীগ্রামে আসে। বাস থেকে নেমেই সরাসরি মা মোবাইল প্যালেসে গিয়ে ১০ মিনিটের ব্যবধানে মালামাল চুরি করে। ব্যাগভর্তি মালামাল নিয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটে যায়। সেখান থেকে দুটি সিএনজি ভাড়া করে নাটোর যায়।