October 13, 2024, 1:09 pm
স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়া শহরের শরিফা ট্রেড সেন্টারস্থ (নবাব আলতাব আলী সুপার মার্কেট) অবিভক্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী ও তার বাঙালি স্ত্রী হামিদা বানুর কবরের মাঝে চারটি পিলার বসিয়ে কালজয়ী এই বাঙলি নেতার ছাদ দিয়ে কবর ঢেকে দেওয়া হচ্ছে।
পৌরসভা অনুমোদিত নকশার বাইরে স্থাপনা করার কোন এখতিয়ার না থাকলেও মার্কেট কর্তৃপক্ষ কবরের উপর ছাদ দিয়ে উর্দ্ধমুখি সম্প্রসারণের কাজ করে চলেছে। লোক চক্ষুর আড়ালে কাজ করার জন্য কয়েক দিন আগে কবর ঘিরে দেওয়া হয়েছে। কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করা হচ্ছে।
সৈয়দ মোহাম্মদ আলী ছিলেন বিখ্যাত বাঙালি রাজনীতিবিদ। তার পুরো নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী হলেও মোহাম্মদ আলী বগুড়া নামেই তিনি সুপরিচিত। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত দায়িত্ব¡ পালন করেন। সৈয়দ মোহাম্মদ আলীর জন্মস্থান বগুড়া। তার পরিবার বাংলার ধনবাড়ির নবাব পরিবারের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল।
তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন এবং লেখাপড়া শেষ করে রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৩৭ তে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি খাজা নাজিমুদ্দিন-এর মন্ত্রী সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী হবার ঠিক আগে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হবার পর তিনি সংবিধান প্রণয়ণকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং ছয় মাসের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন সংক্রান্ত একটি সূত্র আইনসভায় পেশ করেন। তার এই সুত্রটি পাকিস্তানের ইতিহাসে “বগুড়া ফর্মুলা” নামে পরিচিত। ১৯৫৪ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১৯৬২ সালে তিনি আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হন।
১৯৬৩ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ আলী বগুড়া মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বগুড়ায় নবাব বাড়ি চত্ত্বরে আমবাগানে কবর দেওয়া হয়। পাকিস্তান সরকার ওই স্থানে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে স্মৃতিসৌধ করতে চেয়েছিলেন। বলেই ওই খানে কবর দেওয়া হয় বলে জানান, বগুড়ার ইতিহাসবিদ সাংবাদিক আব্দুর রহিম বগরা।
এদিকে মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী হামিদা বানুর কবরের উপর ছাদ দিয়ে উর্দ্ধমুখি সম্প্রসারণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বগুড়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা অবিলম্বে কবরের উপর ছাদ নির্মাণের অপচেষ্টা থেকে দূরে সরে আসার জন্য মার্কেট কতৃপক্ষ‘র প্রতি আহবান জানান।
এ ব্যাপারে বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, তার জানামতে পৌরসভা থেকে মার্কেটের যে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে তাতে কবরের উপর ছাদ বা মার্কেট নির্মানের বিষয়টি নাই। নকশার বাইরে এটি করা অবৈধ।
তিনি বলেন, এ জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করা হবে।