October 3, 2023, 2:49 pm
যমুনা নিউজ বিডিঃ ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে জনমনে। অনেকেই দৈনন্দিন জীবনের রুটিন পরিবর্তন করেছেন। রাজধানীর ধানমন্ডি লেকে নিয়মিত হাঁটতে আসেন মোশাররফ হোসেন। থাকেন ধানমন্ডি ১৫ নম্বর এলাকায়।
আরটিভি নিউজকে তিনি বলেন, আগে খুব ভোর বেলায় পার্কে আসতাম। এখন দেরি করে আসি। এডিস মশাতো ভোরে কামড়ায়। তাই ভয় কাজ করে। হাঁটার সময় চেন্স করে নিয়েছি।
রাজধানীর রমনা পার্কে নিয়মিত হাঁটতে আসেন প্রফেসর মো. হেমায়েত হোসেন। তার বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি। আগে সকালে হাঁটলেও এখন হাঁটেন দুপুরে।
দুপুরে হাঁটার কারণ জানতে চাইলে তিনি আরটিভিকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সচেতন থাকা জরুরি। শরীর ঠিক রাখতে হাঁটতে হবে। এডিস মশা যাতে কামড়াতে না পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত।
একই অবস্থা বিরাজ করছে অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। সবাই আতঙ্কে আছেন।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতষ্ঠান, রাস্তাঘাট, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, বিনোদন পার্কসহ সর্বত্র ডেঙ্গুর ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর বিপজ্জনক বিস্তার ঘটেছে উল্লেখ করে সংক্রমণ রোধে হেলথ ইমারজেন্সি বা জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ।
রোববার (৯ জুলাই) জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ফয়জুল হাকিম সই করা এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে সই করেন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন-অর রশিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রওশন আরা, জনস্বাস্থ্য সংগঠক অনুপ কুন্ডু ও সামিউল আলম।
এতে বলা হয়, দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ডেঙ্গুরোগের বিস্তার রোধে ওয়ার্ড পর্যায়ে এডিস মশা প্রজননবিরোধী প্রচার অভিযান চালাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে।
বিবৃতিতে রাজধানী ঢাকা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত সর্বত্র বিনামূল্যে ডেঙ্গুরোগীর পরীক্ষা ও চিকিৎসার দাবি জানানো হয়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শনিবার (৮ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে রোববার (৯ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ৮৩৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এসময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫১৬ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২০ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৭৫০ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৯৬৮ জন এবং অন্য বিভাগসমূহের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৮২ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ৯৫৪ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ৯০ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৮৬৪ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়া ১০ হাজার ১৩১ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭ হাজার ৬৬ জন এবং ঢাকার বাইরের ৩ হাজার ৬৫ জন।
এদিকে নতুন ছয়জনের মৃত্যুসহ চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৭৩ জন। গত ৪ জুলাই ডেঙ্গুতে একদিনে বছরের সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ২৭ জনের।
আর ২০২০ সালে করোনাকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়নি। তবে ২০২১ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন এবং ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।