September 27, 2023, 9:24 am
যমুনা নিউজ বিডিঃ বছরের কোন সময় আলু প্রতি কেজি ১২-১৫ টাকা। আবার সেই আলুর বাজারদর একটা সময় এসে দাঁড়ায় ৬০-৭০ টাকা। আলুর বাজার এমন অস্থিতিশীল হল কেন? এমন প্রশ্ন জনমনে। খুচরা বাজারে আজ অ্যাসটরিক-গ্র্যানুলা (সাদা) ৪০ টাকা, কার্ডিনাল (লাল) ৫০ ও বগুড়ার দেশি গোল আলু ৬০ টাকা প্রতিকেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সে হিসেবে বাজারে আলুর দাম বেড়ে প্রকারভেদে এখন প্রতি কেজি হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। যা কিছুদিন আগেও ছিলো প্রতি কেজি ২৫ টাকা। আলুর এ মূল্যবৃদ্ধি শুরু ঈদুল ফিতরের পর থেকে। ঈদুল ফিতরের পরপর প্রতি কেজি আলু ২৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। অর্থাৎ কয়েকমাসের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। সরবরাহের বড় কোনো সংকট না থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়ে রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উৎপাদনের সঙ্গে আলুর এ মূল্যবৃদ্ধির কোন কোন যোগসূত্র নেই। প্রতিবছর আমাদের যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয় তা ব্যবহারের পরও ২০ লাখ উদ্বৃত্ত থাকে। তাহলে আমাদের আলুর বাজারে সংকট কোথায়? সরবরাহে কোন ধরণের সংকট না থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে আলুর এ মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে বলছেন ব্যবসায়ীরা।
শুধু দেশের চাহিদা পূরণই নয়, আলু উদ্বৃত্ত থাকায় প্রতি বছর সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে আলু রপ্তানিও করছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের হিসাব বলছে: ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টন (উৎপাদনের ২৫ ভাগ আলুর বীজ ও অপচয় ধরা হয়েছে)। ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এবং ৩ লাখ বিদেশি-সহ মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩৭২ জন হিসাবে আলুর চাহিদা ৮৯ লাখ ৯২ হাজার টন থেকে সর্বোচ্চ ৯১ লাখ ৯ হাজার টন। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকে অন্তত ২০ লাখ টন। এখন পর্যন্ত পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত আলুর রয়েছে ২৬ লাখ ৫৩ হাজার টন।
হিসাব বলছে: কৃষক পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর উৎপাদন মূল্য ৮ থেকে ১০ টাকা। সেটার সঙ্গে পরিবহন-প্যাকেজিং-আড়তদারি যোগ হলে খরচ পড়ে প্রতিকেজি ১২ থেকে ১৪ টাকা। সেই আলু যদি কোল্ড স্টোরে রাখা হয় তাহলে খরচ কিছুটা বেড়ে যায়। তাও কেজি প্রতি ১৬ থেকে ১৮ টাকার বেশি না। সেই হিসেবে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে আলুর দাম থাকা উচিত। কিন্তু হচ্ছে না। অতি মুনাফা লোভীদের নজর আলুর ওপর।
ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী আমীর আলী আলুর দাম বাড়া প্রসঙ্গে বলছেন: বগুড়া থেকে সর্বশেষ কেনা আলুর দাম পড়েছে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা ৪০ পয়সার মতো। এরপর পরিবহন ও শ্রমিকের খরচ আছে। তাতে ৪০ টাকার নিচে পাইকারিতে আলু বিক্রি করা যাচ্ছে না। মোকামে দাম বেশি থাকায় বাড়তি দরে আলু কিনতে হচ্ছে। তবে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।
তবে আমীর আলীর এ দাবি অস্বীকার করে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলছেন: গতবছরের তুলনায় চলতি বছর আলুর উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে আলু সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। প্রথম দিকে কৃষক কিছুটা আলু ধরে রেখে বিক্রি করে লাভবান হয়েছে। এখন পাইকারি বিক্রেতা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা আলুর ব্যবসায়ী আছেন তারা দাম বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে ৩৫-৩৬ টাকা নয়। বগুড়ায় সাদা আলু ৩০ টাকা এবং লাল আলু ৩১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলু বিক্রি না করে ধরে রাখলেই লাভবান হওয়া যায় ব্যবসায়ীদের এমন চিন্তার কারণে আলুর দাম বাড়ছে বলে করেন আজাদ চৌধুরী বাবু।