April 23, 2024, 5:03 pm

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে গরমে তালের শাঁস বিক্রির ধুম

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ উত্তরাঞ্চলের জেলা গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা এলাকায় ফল বাজারে মৌসুমি আম-জাম, আনারস-তরমুজ ও লিচু-কাঠালসহ বাহারি নানা ফল পাওয়া গেলেও একমাত্র নির্ভেজাল ফল হচ্ছে কাঁচা তাল বা তালের আঁটি। এসব রকমারি ফলের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে উঠেছে সুস্বাদু তালের আঁটি। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি। সারিবদ্ধ তালগাছে থোকায়-থোকায় ঝুঁলে আছে কচি তাল। অনেক গৃহস্থ পরিবার পাকা তালের অপেক্ষায় না থেকে তুলনামূলক একটু বেশি অর্থ পাবার প্রত্যাশায় বিক্রির জন্য কচি তাল বাজারে তুলেছেন। এই গরমে হরেক রকম মৌসুমী ফলের সাথে মানুষের কাছে দিন দিন তালের আঁটির কদর বেশ জমে উঠেছে। তাল আঁটির কদর বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হলো; এটিতে কোনো কীটনাশক বা ফরমালিন অথবা কার্বোডাইট মেশানোর সুযোগ নেই বা প্রয়োজন পড়ে না। অনেকেই যেন-তেন রাস্তার ধারে বসে বা দাঁড়িয়ে এ ফল খাচ্ছেন। কেউ কাঁধি ধরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। তীব্র গরমে তালের আঁটি মানবদেহের জন্য একটি উপকারী ফল। তীব্র গরমে একটুখানি স্বস্তি পেতে তাল আঁটির কদর বেড়েই চলেছে উপজেলা জুড়ে। পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে তালের আঁটি এখন জমজমাট ভাবে বিক্রি হচ্ছে। গ্রামগঞ্জের গৃহস্থ পরিবারগুলোর অনেকেই তালের আঁটি বিক্রি করে এখন বেশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। বেশ চাহিদার সহিত বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, রাস্তার ধারের ফুটপাতে কিংবা বাজারের পাশে এককোনায়  বসে দোকানীরা অনায়াসে  বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। কাঁচা তাল আঁটিতে নাকি যথেষ্ট পরিমাণ মিনারেল রয়েছে।

যা মানবদেহের জন্য বেশ উপকারী। রিক্সাচালক থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী-পেশার লোকজনই মৌসুমী এ ফল তালের আঁটি কিনতে বিক্রেতা দের কাছে ভীড় করছেন। গরমে একটুখানি স্বস্তি পেতে তালের আঁটির নাকি জুরি নেই। আর অন্যরকম একটি স্বাদের আস্বাদন পেতে তালের আঁটি দেদারসে খাচ্ছেন ছোট-বড় সকল বয়সির মানুষজন। তালের আঁটি একটি ঠান্ডা জাতীয় ফল। তীব্র গরম থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে তালের আঁটি একটি সুস্বাদু ফল। প্রায় সব বয়সের মানুষের কাছেই এটি একটি বেশ প্রিয় খাবার। শখের বসে অনেকেই তালের আঁটি খেয়ে থাকে। তুলনামূলক কম দামে ভালো খাবার বলে বাজারে এর কদরও বেশ ভালো। একটি তালের আঁটি বর্তমানে ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক-একটি তালের ভিতরে তিন-চারটি আঁটি বা শাঁস থাকে। মৌসুমি পেশাদার বিক্রেতারা গ্রামে-গ্রামে ঘুরে গাছ মালিকদের নিকট পাইকারী মূল্যে কচি তাল ফল কিনছেন। প্রকারভেদে ছোট-বড় একটি তালগাছে তিনশো থেকে পাঁচশো তাল ধরে বলে গাছীরা জানায়। পলাশবাড়ী পৌরশহরের গাইবান্ধা বাসস্ট্যান্ড, সজিব টেইলার্স চত্বর, জিরোপয়েন্ট চৌমাথা মোড়, কালীবাড়ী বাজারের একাধিক পয়েন্ট, জনতাব্যাংক মোড় ও উপজেলা পরিষদ গেটসহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে দেদারসে তাল আঁটি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। সজিব টেইলার্স চত্বরের ফুটপাতে বিক্রেতা ইব্রাহিম মিয়া জানান, এক একটি তালের আঁটি ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। পৌরশহর এলাকা ছাড়াও উপজেলার গ্রামাঞ্চলে তালগাছ অধ্যূষিত বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব তাল আঁটি আমদানি করা হয়ে থাকে। বর্তমান সময় বিভৎস গরমের ধক্কলে অপরিপক্ক এসব তালের আঁটির চাহিদা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি বেশি লাভের আশায় তালের আঁটি ব্যবসায় অনেকেই নেমে পড়েছেন।

একটি তাল গাছের আঁটি ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় কিনে নেন পাইকার বিক্রেতারা। এরপর ওই গাছ থেকে অপরিপক্ক কিছু তাল কেটে নেয়া হয় আর বাকী তাল গাছেই রেখে দেয়া হয়। এভাবেই বিভিন্ন এলাকার গাছ মালিকের কাছ থেকে অপরিপক্ক তাল কিনে সেগুলোকে শহরে নিয়ে আসেন তারা। এতে খানিকটা পরিশ্রম হলেও লাভের পরিমাণ সন্তোষজনক হওয়ায় পরিশ্রমের কথা তাদের তেমন মিেন পড়ে না বলে জানান বিক্রেতারা। দিনভর তাল আঁটি বিক্রি করে গড়ে ৭শ’ থেকে ৯শ’ টাকা লাভ করছেন বিক্রেতারা। বছরের পর বছর প্রতি বছরই মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে মৌসুমি তাল আঁটি বিক্রি ব্যবসায় অনেকেই নিজেদের সম্পৃক্ত করে থাকেন। তারা জানান, ব্যবসাটি বছর জুড়ে একবারই হয়। তাই প্রতিবছর বাড়তি কিছু লাভের আশায় ব্যবসাটি করে থাকি। বাকী সময় শহর-বন্দর গ্রাম-গঞ্জের এখানে-সেখানে রাজমিস্ত্রিসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকি। এ দিয়েই চলে আমার সংসারের ভরণ পোষণের ব্যয়। বিক্রেতারা জানান, তালগাছ এখন আর আগের মতো যত্রতত্র সব জায়গায় নেই। একের পর এক তাল গাছ কেটে ফেলায় তালের ফলন কম হচ্ছে। ফলে চাহিদার তুলনায় পাকা কিংবা কাঁচা তাল আঁটির সংকট লেগেই থাকছে। তালগাছ বড় হতে বেশ সময় লাগে। যে হারে নিধন করা হয় সেই হারে রোপণ না হওয়ায় দিন-দিন তালগাছের সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। আগামীতে এ ফল হয়তো পাওয়া নাও যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD