March 28, 2024, 6:20 pm

গোপালগঞ্জে এক দশকে মাছের উৎপাদন প্রায় বেড়েছে ৩ গুণ

যমুনা নিউজ বিডিঃ গত এক দশকে গোপালগঞ্জে মাছের উৎপাদন ৩ গুণ বেড়েছে। খাল, বিল, জলাভূমি ও নদী বেষ্টিত এই জেলার ৫ উপজেলায় মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্ববধানে মিঠা পানির মাছ চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ কারণে প্রতি বছরই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এই সেক্টরে জেলার অন্তত ৬০ হাজার মানুষের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। মৎস্য চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকটাই চাঙ্গা। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায়  ২২৯টি বিল ও জলাভূমি, ১০টি নদী, ৬টি বাওড় ও ৩৩৪টি খাল রয়েছে। এসব উৎস হতে  ২০১১ সালে  ১৪ হাজার ২২৯ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে।  ২০২১ সালে জেলায়  ৪১ হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। সেই হিসেবে বিগত ১ দশকে জেলায় মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। ২০২১ সালে খাল, বিল, নদী ও বাঁওড়ে  ১০ হাজার মেট্রিক টন পুঁটি, ট্যাংরা, শৈল, মাগুর, কই, শিং, টাকি, খলিশা, গজার, রুই, কাতলা, বোয়াল, আইড়, চিংড়ি, ইলিশ, নান্দেল সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়েছে। ১৯ হাজার ৩৫০টি বেসরকারি পুকুর ও ১৩২টি সরকারি খাস পুকুরে ১৭ হাজার ১৫৮ জন খামারী  ৩১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙাশ, তেলাপিয়া,গ্রাসকার্প, কই, শিং, পাবদা, গুলশা ট্যাংরা, উৎপাদন করেন।

এ ছাড়া ২ হাজার ৩৭৫ চিংড়ি ঘেরে ১০০০ খামারী ১ হাজার ৭১৩ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন করেন। সব মিলিয়ে জেলায় ২০২১ সালে ৪১ হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি মাছ গড়ে ২০০ টাকা দরে খামারী ও মৎস্যজীবীরা বিক্রি করেন। সে হিসেবে এ জেলায় ৮ ৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার মাছ উৎপাদিত হয়।  জেলা মৎস্য  কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, জেলার টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, সদর, মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার বিশাল এলাকা জলাভূমি বেষ্টিত। এসব এলাকায় মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে  মৎস্য চাষিরা  মাছ চাষ সম্প্রসারণ করছেন। বিগত ১ দশকে এই জেলায় মাছের উৎপাদন প্রায় ৩ গুন বেড়েছে। জলাভূমি এলাকার জমির মালিকরা মাছ ও ধান চাষের ওপর জোর দিয়েছে। তারা জমিতে ঘের তৈরী করে বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করছেন। আর শুস্ক মৌসুমে ধান চাষ করছেন। এ ছাড়া ঘের পাড়ে সবজির আবাদ করে অতিরিক্ত আয় করছেন।  অনেকে আবার সারা বছর মাছ চাষ করছেন। এতে মৎস্য খামারির আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৎস্য খামারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে জেলার ৪৩ হাজার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর।  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া গ্রামের মৎস্যচাষী হাফিজুর রহমান  বলেন, আমি মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। আমরা বিলের শ্যাওলা , গমের ভুসি ও চালের কুড়া দিয়ে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করি। তাই আমাদের মাছের স্বাদ নদী বা বিলের মাছের মতই। সারাদেশে আমাদের মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মাছ চাষ লাভজনক ব্যসায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে আমি প্রতি বছরই মৎস্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায়  মাছ চাষ সম্প্রসারণ করছি। আমর মাছ চাষের সাফল্য দেখে অনেকেই মাছ চাষে ঝুঁকছেন।

মুকসুদপুর উপজেলার উজানী গ্রামের মৎস্য চাষি খলিলুর রহমান সোহেল বলেন, মৎস্য খাদ্যের দাম বেড়েছে। আমরা মৎস্য খাদ্য নির্ভর মাছ চাষ করলে লাভবান হতে পারতাম না। চান্দা বিলে আমার ঘের। এখানে ন্যাচারাল পরিবেশে ও বিলের শ্যওলা সহ অন্যান্য খাবার দিয়ে খুব কম খরচে আমরা মাছ উৎপাদন করি। তাই এ মাছ চাষে আমাদের লাভ থাকে। এখন পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। তাই আমরা সরাসরি ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছ বিক্রি করে আরো বেশি টাকা আয় করতে পরছি। মৎস্য খাদ্য নির্ভর খামারীদের কথা চিন্তা করে মাছের খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি জানান ওই মৎস্য খামারি। নতুন মৎস্য চাষি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া গ্রামের জামাল শেখ বলেন, আমার বিলের জমিতে বছরে একবার বোরো ধান ফলত। তারপর ৭ মাস জমি জলমগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকত। এতে আমদের কোন আয় হত না। আমি জমি কেটে  ২ বছর আগে মাছের ঘের করেছি। এখানে মাছ চাষের পাশাপাশি একই ঘেরে ধান ও সবজি আবাদ করছি। সার বছরই এই খামার থেকে আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামের মৎস্য চাষি আব্দুর রহমান বলেন, মাছ চাষে আমাদের এলাকায় অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তারা মৎস্য খামারে মাছ, ধান ও সবজি চাষের কাজ করছেন। এখান থেকে তারা প্রতিদিন ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।

কাশিয়ানী উপজেলার সিতারামপুর গ্রামের শ্রমিক সোবহান সরদার (৪৫) বলেন, মাছ চাষ বেড়েছে। তাই মৎস্য খামারে আমাদের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে। এখান থেকে মাসে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছি। পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD