April 24, 2024, 5:09 pm

বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসব শুরু

ষ্টাফ রিপোর্টার ঃ শুক্রবার বগুড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘ জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা’। প্রতি বছরের ন্যায় আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) উদ্যোগে এদিন সকাল থেকে সেউজগাড়ি ইসকন মন্দিরে অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মাধ্যমে শুরু হয়ে দিনব্যাপী পর্যায়ক্রমে ধর্মীয় আলোচনা সভা, ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ এবং রথযাত্রার সার্বিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

এদিন বিকেলে শহরের সেউজগাড়ি ইসকন কার্যালয় থেকে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল। ইসকন বগুড়ার অধ্যক্ষ খরাজিতা কৃষ্ণ দাসের ব্যবস্থাপনায় উদ্বোধনকালে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য দিলীপ কুমার দেব, বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাগর কুমার রায় ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল রায়, সংগঠনের সাবেক সভাপতি অমৃত লাল সাহা, পুলিশ লাইন্স শিব মন্দির কমিটির সভাপতি আনন্দ মোহন পাল, জাতীয় ক্রীড়াবিদ গোপাল তেওয়ারী, চঞ্চলমোহন রায়, পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া পৌর কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ, সাধারণ সম্পাদক সুজিত তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সঞ্জু রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখর রায়সহ ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শহরের এই অন্যতম বড় রথযাত্রা শহরের সেউজগাড়ি থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রস্থল সাতমাথা হয়ে থানামোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি হয়ে কালিতলা থেকে ঘুরে পুনরায় সাতমাথা হয়ে শ্রী শ্রী পুলিশ লাইনস্ শিব মন্দিরে গিয়ে সমাপ্ত হয়। উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত রথযাত্রার মূল উৎসব এই শিব মন্দিরেই পালিত হবে। একই দিনে শহরের চেলোপাড়া হরিবাসর মন্দির থেকে আরেকটি রথযাত্রা প্রতি বছরের ন্যায় দত্তবাড়ি দেবসেবা ট্রাস্টি মন্দিরে গিয়ে সমাপ্ত হয় সেখানেও ভক্তবৃন্দের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

এইবছর রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পৌর কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝে তারা খুব সুন্দরভাবে রথযাত্রা উৎসবের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন।

তিনি বলেন, করোনাকালীন দীর্ঘ প্রতিবন্ধকতার পর বগুড়ায় এই উৎসবে প্রায় ৫ হাজার ভক্তরা উৎসবমুখরভাবে অংশগ্রহণ করেন। যেখানে তাদের সংগঠনের পক্ষে ভক্তদের জন্যে প্রায় ৫ হাজার বোতল পানি এবং প্রসাদ স্বরুপ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

তিনি আরও জানান, রথযাত্রার বিশাল ভিড়কে নিয়ন্ত্রণেও এইবছর ইসকনের সেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষে প্রায় ৫ শতাধিক সেচ্ছাসেবী কাজ করেছেন।

বগুড়ায় রথযাত্রা উপলক্ষ্যে জেলা পুলিশের পক্ষে নিরাপত্তা প্রদানের চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আলী হায়দার চৌধুরী জানান, ধর্মীয় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোন বিশৃঙ্খলা না করতে পারে সেই লক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যেখানে পোষাকে ও সাদা পোষাকের পুলিশ পুরো সমাবেশকে ঘিরে রাখে কঠোর নিরাপত্তার বেষ্টনিতে। আবার জেলা পুলিশের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও রথযাত্রা উৎসবে জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালাহ্উদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটের তৎপরতাও ছিল প্রশংসনীয়।

উল্লেখ্য, সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের মতে, এই রথে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ, সুভদ্রা এবং বলরাম। তাদের বিশ্বাস রথের উপরে খর্বাকৃতি বামন জগন্নাথ দেবের দর্শন করলে আর পুনর্জন্ম হয় না এবং সেই সাথে রথের দড়ি ভক্তিসহকারে টানা মহাপূণ্যের স্বীকৃতি দেয়া আছে সনাতন ধর্মে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD