যমুনা নিউজ বিডি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘অনিয়ম’ ও ‘ভোট কারচুপির’ অভিযোগ এনে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার কথা বলেছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু মামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি বেশ ধন্দের মধ্যে পড়েছে। মামলার বিষয়ে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন আগ্রহ প্রকাশ করলেও অধিকাংশই অনীহা দেখাচ্ছেন।
নির্বাচন পরিচালনা বিধি-২০০৮ এর ৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনের ফলের গেজেট গত ১ জানুয়ারি প্রকাশ হয়।
এরপর ৩ জানুয়ারি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণা দেয়, তারা মামলা করবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী রুমানা মাহমুদ, বরিশাল-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী জহির উদ্দীন স্বপন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের প্রার্থী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদসহ বেশ কয়েকজন আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
তবে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার জন্য নির্বাচনের রেজাল্টশিট লাগবে, কিন্তু তা দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগের কী অবস্থা, কতটুকু ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে সবাই জানে। বিচার বিভাগে ন্যায়বিচার থাকলে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হতো না।’
মামলা করার আগ্রহ আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে আমি মনে করি, আমি জনগণের আদালতে মামলা করেছি। জনগণ এর বিচার করবে।’
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক আসনের নির্বাচনে অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দলীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছে। তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিচার বিভাগের ওপর হতাশা প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, ‘সব জায়গায় দলীয়করণ, তাই মামলা করে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট মামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাচ্ছে না। প্রার্থীরা নিজ উদ্যোগে মামলা করবেন।’
নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত কয়টি মামলা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আর এক সপ্তাহ সময় আছে। সময়সীমা শেষ হলে এ বিষয়ে জানানো হবে।’
নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার বিষয়ে বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলার নেই। এটা তো ভুয়া ভোটের সরকার। এখানে কার কাছে মামলা করবেন? সব জায়গা তো মহাভোট ডাকাতির সরকারের কবজায়। এখানে তো বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে, ডুকরে ডুকরে কাঁদে। বিচার চাওয়ার জায়গা নেই। তারপরও বলেছি, যারা (বিএনপির প্রার্থী) মনে করবেন তারা মামলা করবেন।’
তবে এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা মামলা করছি না। কারণ, নির্বাচনে কী হয়েছে দেশের মানুষ সবই জানে। মামলা করে কোনো লাভ নেই।’